সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে এবার আবারও আলোচনায় এসেছে মহার্ঘ ভাতা। আগামী অর্থবছর থেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা চালুর জন্য উচ্চপর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে খরচ বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য বাজেট প্রভাব পর্যালোচনা চলছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যৌথ আলোচনা চলছে মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের উপযোগিতা যাচাই করতে। এ লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী মঙ্গলবারই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৫ সালে সর্বশেষ পে-স্কেল বাস্তবায়ন হয়। এরপর নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও নতুন কোনো বেতন কাঠামো চালু হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি দিতে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের বিষয়টি সামনে এসেছে। বিশেষ করে ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় ব্যয়বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি নতুন করে মহার্ঘ ভাতা চালু হয়, তাহলে পূর্বের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে অতিরিক্ত প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে ব্যয় করতে হবে।
অর্থ বিভাগের তৈরি করা প্রস্তাবনায় দুই ধরনের বিকল্প বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রথমটি অনুযায়ী, ১১ থেকে ২০তম গ্রেডে ২০ শতাংশ এবং ১ম থেকে ১০ম গ্রেডে ১০ শতাংশ ভাতা দেওয়া হবে। এতে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় বিকল্প অনুযায়ী, ১ম থেকে ১০ম গ্রেডে ১৫ শতাংশ হারে ভাতা চালু করলে ব্যয় দাঁড়াবে আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকায়।
বর্তমানে সরকারি খাতে বেতন-ভাতা বাবদ মূল বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে বিভিন্ন পদোন্নতির কারণে সংশোধিত বাজেটে এই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটিতে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট সুবিধা পেয়ে আসছিলেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে তখনও নতুন পে-স্কেলের দাবি জোরালো হয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মহার্ঘ ভাতা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল।
চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির চাপে দীর্ঘ সময় পর আবারও সামনে এসেছে এ প্রস্তাব। এবার যদি জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি অনুমোদন দেয়, তাহলে তা প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এমন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য তা হবে একটি বড় ধরনের স্বস্তির বার্তা।