বাংলাদেশ জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ ও বসুন্ধরা কিংসের রক্ষণভাগের অন্যতম ভরসা সাদ উদ্দিন ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে এই কঠোর শাস্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও বুধবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থাটি।
ঘটনার সূত্রপাত ২ মে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা কিংস বনাম আবাহনী লিমিটেডের ম্যাচে। কিংস অ্যারেনায় আয়োজিত ম্যাচে ম্যাচ কমিশনার সুজিত ব্যানার্জিকে ধাক্কা দেন সাদ উদ্দিন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ১৪ মে অনুষ্ঠিত বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাফুফের আয়োজিত কোনো ফুটবল ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। সেইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও গুণতে হবে।
জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলা এই ডিফেন্ডার অবশ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছেন না। ফলে আগামী ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামতে কোনো বাধা থাকছে না তার। কোচ হাভিয়ের কাবরেরার আস্থাভাজন হিসেবে বেশ কয়েকটি ম্যাচে মূল একাদশে ছিলেন সাদ, যেখানে তার পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়েছিল।
তবে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে মেজাজ হারিয়ে মাঠে শৃঙ্খলাভঙ্গ ঘটানো শুধু সাদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারেই নয়, তার ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের শিরোপা লড়াইয়েও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। একই ম্যাচে কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সিকে অশালীন অঙ্গভঙ্গির জন্য চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুধু ব্যক্তি নয়, ক্লাব ও মাঠ ব্যবস্থাপনাতেও শৃঙ্খলা ফেরাতে কড়া অবস্থানে গেছে বাফুফে। কিংস অ্যারেনায় বারবার দর্শকদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে পরবর্তী ছয়টি হোম ম্যাচ ‘সাসপেন্ডেড’ দর্শকশূন্য রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ছয় মাসে দর্শকেরা যদি আবার কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটায়, তবে এই শাস্তি সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।
বাফুফের সর্বশেষ শৃঙ্খলা কমিটির সভায় দেশের ফুটবলের নানান স্তরের অপ্রীতিকর ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়। দ্বিতীয় স্তরের বিসিএল বা চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের কয়েকটি ম্যাচে রেফারির ওপর হামলার ঘটনাও আলোচনায় আসে। বিশেষ করে ১১ মে সিটি ক্লাব বনাম বাফুফে এলিট একাডেমির ম্যাচ শেষে রেফারি জিম এম চৌধুরী নয়নকে মারধরের ঘটনায় সিটি ক্লাবকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এই ঘটনায় ক্লাবটির গোলরক্ষক শাহ আলমসহ চার ফুটবলার মাসুম মিয়া, মিজানুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম এবং আরও একজনকে এক বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ওয়ারী ক্লাব ও ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তাদের কয়েকজন খেলোয়াড়কেও ব্যক্তিগতভাবে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ফুটবলে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং মাঠের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এবার বাফুফে আগের তুলনায় অনেক কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মাঠে খেলোয়াড়দের আচরণ এবং দর্শকদের অংশগ্রহণ—দুই দিকেই নিয়ম ভাঙলেই দ্রুত ও স্পষ্ট শাস্তি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সাদ উদ্দিনের নিষেধাজ্ঞা এখন ফুটবল অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত বিষয়। সামনে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও তার পারফরম্যান্সের ওপর নজর থাকবে, তবে প্রিমিয়ার লিগে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকা তাকে কতটা প্রভাবিত করবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।