মালয়েশিয়া শ্রমবাজার কি আবার খুলছে?

এক বছর বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালুর সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। এই লক্ষ্যে আজ মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা।

এই বৈঠক সফল হলে বর্তমান সমঝোতা স্মারকের অধীনে পুনরায় কর্মী পাঠানোর পথ খুলে যেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং এক উপসচিব।

২০২৪ সালের শুরুতে মালয়েশিয়া তাদের শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। সে সময় ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দালাল চক্রের সক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ ওঠে। এর ফলেই বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্যও শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়।

আজকের বৈঠকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। মূল আলোচ্য বিষয় হবে শ্রমবাজার খোলার পদ্ধতি ও নীতিমালা নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং অধিক সংখ্যক বৈধ এজেন্সিকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের অধীনে এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষমতা মালয়েশিয়া সরকারের হাতে থাকায় বাংলাদেশ নতুন কোনো চুক্তি না করে এই স্মারক সংশোধনের প্রস্তাব তুলবে।

এই লক্ষ্যে যৌথ কারিগরি কমিটির সভা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ মালয়েশিয়াকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছিল। অবশেষে গত মাসে মালয়েশিয়া সম্মতি দেয় এবং আগামী ২১ ও ২২ মে ঢাকায় যৌথ সভা আয়োজনের প্রস্তাবও দেয়, যা বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হিসেবে বিবেচিত। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য ছিল। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে দুই বছরে চার লাখ এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে তিন লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে পাঠানো হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী।

মালয়েশিয়ার বাজারে পুনরায় প্রবেশের সম্ভাবনা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। তাদের মতে, যদি ঠিকমতো বাজার খোলা যায়, তাহলে আরও কয়েক লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে, তারা অভিবাসন ব্যয় কমানোকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

সরকার ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর খরচ ৭৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু গবেষণায় উঠে এসেছে, বাস্তবে এজেন্সিগুলো গড়ে প্রতি কর্মীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি নিয়েছে।

এই ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে এবং অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজার পুনরায় চালুর দাবি তুলেছে অভিবাসন খাতে কাজ করা ২৩টি বেসরকারি সংগঠন। তারা সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশও দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য যেমন সুযোগ সৃষ্টি করবে, তেমনি সরকারের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় উৎস হয়ে উঠবে। তবে এই সুযোগ যেনো কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, সে বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাশাপাশি, শ্রমিকদের ব্যয় সীমিত রেখে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম চালু করাটাই এই পর্যায়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের বৈঠকে সেই পথ কতটা পরিষ্কার হয়, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *