ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকা একজন যাত্রী জীবন বাঁচাতে আর্তনাদ করছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর হাত ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি নিচে রেললাইনে পড়ে যান। মাত্র ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে এই ভয়ংকর দৃশ্য ধরা পড়েছে, যা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশন এলাকায়। দুপুর একটার দিকে ট্রেনটি সেখানে দিয়ে যাচ্ছিল। যিনি ট্রেন থেকে পড়ে যান, তাঁর নাম মতিউর রহমান, বয়স ৫২ বছর। তিনি নওগাঁ জেলার রানীনগরের পাড়ইল গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় একজন আদম ব্যবসায়ী। বর্তমানে তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়ার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মতিউরের মাধ্যমে দুই বছর আগে সজীব নামে এক যুবক সৌদি আরব যান। তবে সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জটিলতার কারণে সজীব ইকামা (কাজের অনুমতি সনদ) পাননি। এরপর থেকেই সজীবের পরিবারের সঙ্গে মতিউরের বিরোধ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই পূর্ববিরোধের জের ধরেই এই হামলা।
মতিউরের ছেলে আহসান হাবিব জানান, তাঁর বাবা দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বগুড়া থেকে সান্তাহারে যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি নসরতপুরের কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই, তাঁর বাবার কামরায় থাকা ১০ থেকে ১২ জন যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁকে চলন্ত ট্রেনের দরজা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। সৌভাগ্যবশত ট্রেনের চাকা তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে যায়নি, তবে গুরুতর আঘাতে তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে।
আহত অবস্থায় মতিউরকে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বগুড়ার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা থানায় মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরস্পরের কাছে পাঠাতে থাকে। আদমদীঘি থানা বিষয়টি জিআরপি পুলিশের দায়িত্ব বলে জানালে, তাঁরা সান্তাহার রেলওয়ে থানায় যান। কিন্তু সেখানেও অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজীবের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সজীবের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দাবি করেন, মতিউর তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং ইকামার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। তবে ট্রেনে মারধর বা ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নয়।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ভিডিওটি তাঁদের নজরে এসেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই ঘটনায় যাত্রী নিরাপত্তা, ট্রেনে আইনশৃঙ্খলা এবং আদম ব্যবসার অসাধু দিক নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অসংখ্য মানুষ। তারা দ্রুত অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন।