জমির মালিকানা সংক্রান্ত অনেকেই এক জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি হন—হাতে রয়েছে খতিয়ান, অথচ নেই দলিল। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ে, কারণ দলিল ছাড়া মালিকানা বা জমি হস্তান্তরের ইতিহাস জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, খতিয়ান থাকলেই দলিলের হদিস পাওয়া যায়। কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই মিলবে জমির প্রকৃত দলিল এবং ইতিহাস।
খতিয়ান সাধারণত অনেকে অনলাইন বা ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করেন। কিন্তু এতে কোথা থেকে জমিটি এসেছে, কে হস্তান্তর করেছেন, কবে দলিল হয়েছে—এসব তথ্য থাকে না। ফলে জমির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দলিল না থাকলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনাও থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথম করণীয় হলো খতিয়ানের ভিত্তিতে জমির ওয়ার্কিং ভলিউম বা খসড়া খতিয়ান উত্তোলন করা। ভূমি অফিসের রেকর্ড রুমে গিয়ে এটি সংগ্রহ করা যায়। খসড়া খতিয়ানে সাধারণত দলিল নম্বর, জমির মালিকানা পরিবর্তনের ধরণ, হস্তান্তরকারীর নাম এবং রেকর্ড সংশোধনের বিবরণ উল্লেখ থাকে। এই তথ্যগুলোই মূল দলিল খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
খসড়া খতিয়ান থেকে পাওয়া দলিল নম্বরটি নিয়ে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। সেখানে নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে এবং নির্ধারিত ফি প্রদান করে দলিলের সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করা যায়। এটি আইনি প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতে জমি নিয়ে যেকোনো বিরোধ বা মালিকানা প্রশ্নে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
অনেক সময় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি ভোগ দখলে থাকলেও, পূর্বের কোনো দলিল না থাকায় পরবর্তীতে দলবদ্ধ প্রতারণা, জমির অংশীদারিত্ব বা ওয়ারিশ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এমন সমস্যা এড়াতে খতিয়ান এবং দলিল—দুইটির সমন্বিত তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
প্রক্রিয়াটি যেমন সহজ, তেমনই কার্যকর। সরকারের ভূমি সংক্রান্ত ডিজিটাল সেবার অগ্রগতির ফলে এখন অনলাইনেও অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে দলিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরাসরি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যাওয়াই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পন্থা।
অতএব, যদি খতিয়ান হাতে থাকে কিন্তু দলিল না থাকে—তবে চিন্তার কিছু নেই। নির্দিষ্ট কয়েকটি সরকারি অফিস ঘুরে, সঠিক তথ্য জেনে এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই হাতে আসবে জমির মূল দলিল। এতে আপনার জমি হবে আরও সুরক্ষিত এবং ভবিষ্যতের জন্য থাকবে নির্ভরযোগ্য দলিলের সহায়তা।