রাজধানীর রামপুরার একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার এবং ডলার চুরির ঘটনায় অবশেষে ধরা পড়েছেন বাসার কেয়ারটেকার। চুরি করা অর্থে তিনি কিনেছেন আলমারি ও ফ্রিজ—শেষ পর্যন্ত সেগুলোও পুলিশের হাতে জব্দ হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত কেয়ারটেকার উজ্জ্বলকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৬০ লাখ টাকা এবং আরও ১৪ লাখ টাকা উদ্ধার হয় তার ভগ্নিপতির বাড়ির খাটের নিচ থেকে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উজ্জ্বল চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ মে, যখন বাসার মালিক কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন ভূঁইয়া পরিবারসহ রাজধানী ছেড়ে যান। তার অনুপস্থিতির সুযোগে কেয়ারটেকার উজ্জ্বল ঘরে ঢুকে আলমারিতে রাখা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন। পরদিন সকালেই ব্যাগে করে নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সিসিটিভির ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়ে নিজেই সব নজরদারি অকার্যকর করে তোলেন।
পরবর্তীতে বাসার স্টিলের আলমারি খুলে দেখা যায়, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও সাত হাজার মার্কিন ডলার উধাও। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপরই হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় কেয়ারটেকার উজ্জ্বল ছাড়াও তার স্ত্রী ও মাকে আসামি করা হয়।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি আগে মালিক আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার কক্সবাজারের হোটেলে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। এরপর থেকেই পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে তার ঢাকার বাসায় কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পান। দীর্ঘদিনের নির্ভরতায় তিনি বাড়ির ভেতরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এমনকি আলমারির লকারের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত জেনে ফেলেন।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উজ্জ্বল জানান, চুরি করা টাকার একাংশ দিয়ে তিনি বাড়ির জন্য আলমারি ও ফ্রিজ কেনেন। একইসঙ্গে কিছু টাকা আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের তৎপরতায় সেগুলোও জব্দ হয়। বর্তমানে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার অন্যান্য আসামি এবং অবশিষ্ট চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এই ঘটনার পর থেকে প্রশ্ন উঠছে—যে মানুষটি পরিবারে আস্থাভাজন হিসেবে এতদিন কাজ করেছেন, তিনিই কীভাবে এত বড় এক প্রতারণার পরিকল্পনা করেন? একইসঙ্গে বাসাবাড়ির নিরাপত্তা ও কেয়ারটেকার নিয়োগে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদও দেখা যাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুরির ঘটনায় জড়িত কারও সঙ্গেই আপস করা হবে না এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ উদ্ধার ও মামলার নিষ্পত্তি হবে।