অস্বাভাবিক তাপদাহের প্রভাবে সাতক্ষীরার জনপ্রিয় ‘হিমসাগর’ আম এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে এসেছে। গাছেই আগাম পেকে যাওয়া ও ফল ঝরে পড়ার কারণে চাষিদের দাবির মুখে জেলা প্রশাসন আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন এনেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার প্রশাসনের এক জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পূর্বনির্ধারিত ২০ মে’র বদলে ১৫ মে থেকেই হিমসাগর আম বাজারজাত করা যাবে। মূলত প্রচণ্ড গরমে গাছে থাকা আম পরিপক্ব হয়ে ঝরে পড়তে শুরু করলে চাষিরা নির্ধারিত সময়ের আগেই আম সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেন।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পর বুধবার রাতেই সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বাজারে হিমসাগর আমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। সেখানে প্রতি মণ হিমসাগর আম বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। তবে চাষিরা জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই আম তুলতে বাধ্য হওয়ায় তারা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। তাদের দাবি, কয়েকদিন আগে বাজারে তুলতে পারলে প্রতি মণ আম ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।
চাষি ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, বাস্তব পরিস্থিতির কারণে তারা আম আগেভাগে তুলতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অপর একটি পক্ষের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, উদ্দেশ্য ছিল—অধিক লাভের আশায় সময়ের আগেই আম বাজারে তুলে চাহিদা তৈরি করা।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হিমসাগরের সব গাছ একসঙ্গে পাকে না। ফলে ‘পেকে যাচ্ছে’ বলে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। তবে জনস্বার্থে এবং চাষিদের সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়েই ক্যালেন্ডারে সময় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর আম বাজারজাত করা। তাই আগেভাগে আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, কেউ যদি কাঁচা আম কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে বাজারে তুলতে চায়, তাহলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চাষিরা এবার যেমন আগাম ফল সংগ্রহে বাধ্য হয়েছেন, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে যাতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে কৃষকের ক্ষতি কম হয় এবং বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত থাকে।